আশ্রয় চায় শিশু সামিয়া ও হানিফ - JONOPRIO24

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

আশ্রয় চায় শিশু সামিয়া ও হানিফ

সুফিয়ান বিন হোসাইন,বিয়ানীবাজার প্রতিনিধিঃ  সামিয়া ও হানিফ। সম্পর্কে তারা ভাইবোন। 

সামিয়া বড় আর হানিফ ছোট। ৬ ও ৭ বৎসরের শিশু। ফুটফুটে এশিশুরা এই বয়সে আনন্দ উল্লাস আর খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা থাকলেও তারা তাও পারছে না । বরং তারা এই বয়সে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ মানুষের ধারে ধারে ঘুরছে বেঁচে থাকার জন্য একটুখানি আশ্রয়ের আশায়। ছোট্ট ফুটফুটে এই শিশুরা আজ সকালে ক্ষুধার্থ আর অসহায় চেহারা নিয়ে হাজির হয় সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে। এর পূর্বেও তারা মায়ের সাথে সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলো। কিন্তু এবার গেলো নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য একটুখানি আশ্রয় খুজে পাওয়ার আশায়। সমাজসেবা কর্মকর্তা তাদের কথা শুনে তাদেরকে হস্তান্তর করলেন থানায়। যাতে করে পুলিশ এই ছোট্ট শিশুদের মা অথবা বাবার কাছে তুলে দিতে পারে। এরপর পুলিশ শিশুদের নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলেও কাউকে পায়নি। তালাবদ্ধ ছিল তাদের বাবার বসতঘর। শেষমেষ পুলিশ তাদের নিয়ে আবার থানায় চলে এলো। শিশুরাও অনেকটা নিরাস মনে অসহায় চেহারা নিয়ে থানায় বসে থাকলো। তাদের এই অসহায় ও মলিন চেহারা একটুখানি আশ্রয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। মুখে কিছু বলতে না পারলেও তাদের চেহারা বলে দিচ্ছে তাদের এই আকুতি। তবে শেষ পর্যন্ত তারা কি আশ্রয় পাবে তাদের মা অথবা বাবার কাছে। না কি তাদের আশ্রয় হবে কারো বাড়ি অথবা কোন এতিমখানায়। এমনটিই এখন দেখার অপেক্ষা। হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি কোন কল্পকাহিনী নয়। এটি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আরিজখাঁ টিলার শিশু সামিয়া ও তার ভাই হানিফের বেঁচে থাকার আকুতির বাস্তুবিক ঘটনা। নিষ্পাপ এশিশুদের করুণ এই পরিণতির জন্য দায়ী তাদের বাবা অলি ও চাচা অলিদ মিয়া। মায়ের উপর করুণ নির্যাতনের কারণেই তাদের এই পরিনতি। সামিয়া ও হানিফের বাবা অলি মিয়া পেশায় মাছ বিক্রেতা। মাঝে মধ্যে মাটির কাজও করেন। এলাকায় খারাপ প্রকৃতির লোক হিসেবে সে পরিচিত। বিয়েও করেছে ৬টি। অনেকে তাকে বিয়ে পাগল অলি” বলেও ডাকেন। এলাকার মানুষের সাথে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হত সে। অলির ১ম ও ২য় স্ত্রী তাঁর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে গেলে পরবর্তিতে জকিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুরের দিনমজুর রমিজ উদ্দিনের মেয়ে রিনা বেগমকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর থেকেই সে নানা অজুহাতে রিনার উপর নির্যাতন চালায়। এভাবে তাদের সংসার চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের ঘরে জন্ম নেয় সামিয়া। পরের বছর জন্ম হয় হানিফের। এর মধ্যে আবারো একাধিক বিয়ে করে সে। বাকী স্ত্রীরাও অলিকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন, কেবল রিনা বেগম ছাড়া। রিনা স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ে তাকেন স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু শেষ রক্ষাও হলো না। স্বামী ও দেবরের নির্যাতনে হাঁত ভেঙ্গে গেলে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ছোট্ট শিশুদের রেখে তাকেও চলে যেতে হলো বাবার বাড়ি।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অলি প্রায় দিনই তাঁর স্ত্রী রিনাকে নির্যাতন করত। এভাবে অলির নির্যাতন সহ্য করে তাঁর স্ত্রী দিনযাপন করতে ছিলো। এরমধ্যেও সে একাধিক বিয়ে করে। কিন্তু রিনা ছাড়া আর কেউ তাকে নি। একপর্যায়ে সপ্তাহ দশেকপূর্বে রিনাকে মেরে হাত ভেঙ্গে দেয় অলি ও তাঁর ভাই অলিদ। এমন অবস্থায়ও তারা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় নি। খবর পেয়ে রিনার বাবা রমিজ উদ্দিন রিনাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলেও রিনার সন্তানদের রেখে যান। একপর্যায়ের তাদের পাশ্ববর্তি বাড়ির এক মহিলা রিনার সন্তানদের নিয়ে রিনার বাবার বাড়িতে গেলে রিনার বাবা রিনার দেড়বছরের শিশু আরিফকে রেখে সামিয়া ও হানিফকে ওই মহিলার সাথে ফেরত পাঠান। অসহায় ও মলিনমুখে মায়ের কাছ থেকে ফিরে আসে সামিয়া ও হানিফ। কিন্তু বাবা ও দাদা-দাদিদের সাথে থাকতে পারছিলো না তারা। একপর্যায়ে তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘর থেকে বের করে দেন দাদা সিরাজ ও চাচা অলিদ। এতে তাদের বাবাও কোন বাধা দেন নি। অসহায় অবস্থায় তারা পাশ্ববর্তি একটি বাড়িতে উঠে রাত্রিযাপন করে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তারা চলে আসে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বশিরুল ইসলামের কাছে। তিনি তাদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে তাদেরকে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। বিকেলে পুলিশ সামিয়া ও হানিফকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে কাউকেই পায় নি। পুনরায় তাদেরকে থানায় নিয়ে আসে বিকেলের খাবার খাইয়ে থানায় তাদের বসিয়ে রাখে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত সামিয়া ও হানিফের পরিবারের কেউ তাদের নিতে আসে নি। তবে তাঁদের পরিবারের কেউ তাদের নিতে আসলে পুলিশ তাদেরকে পরিবারের লোকদের হাতেই হস্তান্তর করবে অথবা কোন এতিমখানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে এমনটি জানান বিয়ানীবাজার থানার উপপরিদর্শক শেখর দাস। আর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বশিরুল ইসলাম জানালেন, সামিয়া ও হানিফ তাদের পরিবারের কাছে যেতে চাইলে আমরা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো। না হয় তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Responsive Ads Here